স্বামীহারা এক অসহায় আয়া’র ১৬ বছরের বেতন-ভাতার টাকা আত্মসাত করে তা দিয়ে ওমরাহ হজ পালন করেছেন একজন আওয়ামীপন্থী প্রধান শিক্ষক। এমন অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী আয়া সাজেদা খাতুন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের অন্তর্গত সড়াতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯১ সালে আয়া পদে যোগদান করেন সাজেদা খাতুন। দীর্ঘ ৩৪ বছর চাকুরীর বয়স হলেও তার মধ্যে থেকে ১৫ বছরের উর্ধ্বে প্রায় ১৬ বছরের ন্যায্য বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আয়া’র জন্য সরকারী-বেসরকারীভাবে আসা সকল বেতন-ভাতার টাকাগুলো প্রধান শিক্ষক শহিদুল কৌশলে আত্মসাত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে স্কুলে আয়ার কাজ করার বিনিময়ে মাসে যা রোজগার হতো তা দিয়েই কোনরকমে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিন পার করতেন অসহায় সাজেদা খাতুন। স্কুল প্রধানের ক্ষমতার সাথে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আয়া সাজেদার ৫৭-৫৮ লাখ টাকা লুটে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল ও সভাপতি আমিনুল এমনটাই অভিযোগ সাজেদার।
প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারের জন্য কয়েক বছর যাবত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তর ঘুরেও কোন সুফল পাননি তিনি। আওয়ামীপন্থী প্রধান শিক্ষকের রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে বারবার পরাজিত হয়ে পড়েছে সাজেদার ন্যায় বিচারের দাবি। ভুক্তভোগী আয়া আরও জানান, মাস শেষে সাজেদার থেকে সাক্ষর নেওয়া হলেও মাসিক বেতনের টাকাগুলো আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে কৌশলে তুলে নিতেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রায়ই মিথ্যা অভিযোগ তুলে আয়া’কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে লাঞ্চিত করা, চাকুরী থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা, শারীরিকভাবে নির্যাতন’করাসহ চাকুরী থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে এমন হুমকিও দিতেন তিনি।
এদিকে, প্রায় ১৬ বছর বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত থাকায় ওই সময়ে ধার-দেনা ও ব্যাংক লোনের মাধ্যমে সংসার চালাতে হতো ভুক্তভোগী সাজেদা’কে। ১৫ লাখ টাকা ঋণ থাকায় বর্তমানে ভিক্ষার পথে নামতে হয়েছে তাকে। সরকারী খরচে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এ অধ্যায়নরত সাজেদার মেধাবী ছেলের কোচিং এর বেতনের যোগান দিতেও খেতে হচ্ছে হিমশিম। ১৬ বছরের ন্যায্য বেতন-ভাতার টাকাগুলো ফেরত পেতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসসহ ছাত্র-সমন্বয়কদের সহযোগিতা কামনা এবং দুর্নীতিবাজ আওয়ামীপন্থী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের ন্যায্য বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাজেদাসহ তার স্বজনেরা।
আয়া পদে কর্মরত সাজেদা’র এত বছরের বেতন-ভাতা কোথায় গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কখনো বলছেন, সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলো একারণে আয়ার বেতন আসেনি। আবার বলছেন, সরকারীভাবে আসা বেতন সরকার ফেরত নিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ১৬ বছর যাবত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত স্কুলের আয়া- এমন একটা অভিযোগপত্র গত ১৪ অক্টোবর হাতে পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠ তদন্ত হবে এবং তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।
এদিকে, সরকার পতনের পর সড়াতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওয়ামীপন্থী শহিদুল ইসলামের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দুর্নীতিবাজ শিক্ষক শহিদুল স্থানীয় এমপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’কে ব্যবহার করে বিভিন্ন কায়দায় হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি-কোটি টাকা।
লুটপাটে ফায়দা নিতে প্রধান শিক্ষক শহিদুল একাধারে তিনবার সভাপতির আসনে তার আপন চাচাতো ভাই আওয়ামীলীগ নেতা হাফিজুলকে বসিয়েছেন বলেও অনুসন্ধানে উঠে আসে। আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে, গত ২ বছরেই প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম স্কুলের ৫টি পদে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে তাদের থেকে কামিয়েছেন ১ কোটি টাকা, মাসিক বেতনের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে কোচিং করানো, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য আসা বিভিন্ন প্রকল্পের যাবতীয় টাকা আত্মসাত করা এসব ছিলো তার ওপেন সিক্রেট।
মাসিক ৩১ হাজার টাকা বেতনের একজন কর্মকর্তা হলেও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কয়েক বছর যাবত দুই ছেলের পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে খরচ করছেন ৬২ হাজার টাকা। গত তিন বছরের মধ্যেই কিনেছেন ১০ বিঘা জমি, নিজ বাড়ির সাথে নির্মাণ করছেন একটি মার্কেট ও ছোট ছেলেকে কিনে দিয়েছেন ৩ লাখ টাকার গাড়ি।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষক শহিদুল ইসলামের মাসিক আয়ের পরিমাণ হাজারের ঘর হলেও তারা ব্যয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। দুর্নীতিবাজ শিক্ষক শহিদুলকে বিচারের আওতায় নিয়ে তাদের অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হবে এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী আয়াসহ এলাকাবাসীর।