আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মধ্যে অন্যতম ছিল ঘোড়ার দৌড় (ঘোড়দৌড়) প্রতিযোগিতা। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক এইসব প্রতিযোগিতা। তবে এখনও দেশের কোথাও কোথাও এটি সবান্ধব উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার উমার পুর ইউনিয়নের পাথরাইল গ্রামে স্থানীয় ঘোড়া প্রেমিক এলাকাবাসী ও যুব সমাজের সহযৌগিতায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার ও গ্রামীন মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর নিয়মিত আয়োজনেরই অংশ হিসেবে এবছরও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও মেলার আয়োজন করা হয়। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এই প্রতিযোগীতা শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ঘোড়ার মালিকদেরকে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়।
ঘোড়দৌড় উপলক্ষে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে টগবগিয়ে খুরের আওয়াজ তুলে ছুটে যায় রঙ-বেরঙের ঘোড়া। সাজে সজ্জিত হয়ে ছুটে চলে ঐতিহ্যের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও মেলা উপভোগ করতে মানিকগঞ্জ টাঙ্গাইল জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ আসে। এতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ ষাটোর্ধ বয়স্কসহ নানা শ্রেণীপেশার হাজারো মানুষের ভিড় হয়। ঘোড়াদৌড় দেখতে আগের দিনই স্থানীয়দের বাড়ি ভরে যায় আত্মীয়-স্বজনে।
সকাল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়ার দৌড় ও সওয়ারিদের রণকৌশল উপভোগ করতে মাঠের দুই প্রান্তে হাজির হয় শত শত দর্শনার্থী। তারা গোলাকার মাঠের চারদিকে-ই পাশে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।
খেলা শুরু হলে মাঠের চারদিকে হাজারো দর্শকের উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে ঘোড়া আর সেই ঘোড়দৌড় দেখে উৎসাহিত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। দর্শকের মুহুর্মুহু করতালি আর চিৎকারে অন্যরকম আনন্দ বয়ে যায়। এ যেনো চিরায়ত বাঙালির চিরচেনা মিলনমেলা। এই প্রতিযোগীতায় মানিকগঞ্জ পাবনা সিরাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে বিভিন্ন উপজেলার ঘোড়া অংশ নেয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আগত দর্শকেরা।
ঘোড়দৌড় দেখতে আসা নুর আলম বলেন, আমি ঢাকা থেকে ঘোড়দৌড় দেখতে এসেছি। আমার ঘোড়দৌড় দেখতে অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগে থেকেই এখানে আসা। আমি প্রতি বছর এখানে ঘোড়দৌড় দেখতে আসি। যদিও নদী পারাপার হতে ভয় লাগছে তবে সব কিছু মিলিয়ে খুবই আনন্দ উপভোগ করতাছি।
ঘোড়াদৌড় দেখতে আসা সোহেল বলেন, আমি মানিকগঞ্জ থেকে থেকে ঘোড়াদৌড় দেখতে এসেছি। প্রতি বছর ধরে এখানে ঘোড়াদৌড় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি প্রতি বছর এখানকার ঘোড়াদৌড় দেখতে আসি। এবছরও এসেছি। আমি চাই প্রতি বছর যেনো এখানে ঘোড়াদৌড় ও গ্রামীন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঘোড়াদৌড় দেখতে খুব ভালো লাগে।
উক্ত প্রতিযোগিতায় সুজন রানা এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চৌহালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কারী মঈনুল ইসলাম এবং চৌহালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদ মোল্লা এবং স্থানীয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন হান্নান মন্ডল জাকির সর্দার ও লালন সরকার সহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
এ সময়ে আয়োজক কমিটির সদস্যদের মধ্যে অন্যতম শফিক জানান, আমরা প্রতিবছরই প্রতিযৌগিতার আয়োজন করি আগামীতে আরো সুন্দর করে আয়োজন করার চেষ্টা করবো।