আওয়ামীলীগ শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতনের পাশাপাশি তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করার বিষয়টি ছিলো একদম ওপেন সিক্রেট। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পরেই আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসেবে যেই উপজেলার নাম সিরিয়ালে আসে তা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা।
আর এই কাজিপুর উপজেলায় আওয়ামীলীগ শাসনামলে খুব আরাম-আয়েশেই জীবন-যাপন করতে দেখা গিয়েছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালামকে।
আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করার এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর বিকেলে স্থানীয় একটি পত্রিকার মাধ্যমে বিএনপির যাবতীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আব্দুস ছালাম। ওইসময়ে আব্দুস ছালাম কাজিপুর পৌরসভা শাখা বিএনপির সভাপতির পদে দ্বায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে তার পদোন্নতি হয়।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ শাসনামলে আব্দুস ছালাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে কৌশলে লুটেছেন বিভিন্ন ফায়দা। ওই সময়েই আব্দুস সালাম একজন বিএনপি নেতা হয়ে সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে একটি অজ্ঞাত লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে কাজিপুরের বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল নির্মাণ কাজের টেন্ডার সাবমিট করেন। যেখানে আওয়ামীলীগ শাসনামলে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ’র বাড়িতে থাকা কষ্টসাধ্য হয়েছিলো ওইসময়ে আব্দুস ছালাম উপজেলা বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও কাজিপুরে বেশ আরাম-আয়েশেই বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তবে, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর খোলস বদলিয়ে বিএনপি নেতা বনে গেছেন তিনি। কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন আব্দুস ছালাম। যা নিয়ে কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। লেবাসধারী আব্দুস ছালামের মতো নেতাদের বিএনপির কমিটিতে স্থান দিলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজিপুর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, আব্দুস ছালাম আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে চললেও অজানা কারণে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেননি। তবে একজন আওয়ামীলীগ নেতা যেরকম ফায়দা না পেয়েছে সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের থেকে তার দ্বিগুন সুফল ভোগ করেছেন আব্দুস ছালাম। তারা আরো জানান, গত ৫ আগষ্টের পরে আব্দুস ছালাম মামলা বাণিজ্যের ভয় দেখিয়ে আওয়ামীপন্থী স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ-লাখ টাকা। উপজেলার প্রত্যেকটি বালি মহাল থেকেও করেছেন চাঁদাবাজি। এসব সুবিধাবাদী নামধারী নেতাদের কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে আব্দুস ছালাম ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন আমার ইচ্ছেমতো দল করবো, আপনারা যা পারেন লিখে দেন।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, আমার জানামতে ছালাম যখন পৌরসভার মেয়র ছিলো সেই সময়ে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে যাতায়াত ছিলো ছালামের। সেটা মেয়র হিসেবে করতেই পারে। পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, যেহেতু এবার প্রত্যেক প্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে সুতরাং স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেই সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির কোন মন্তব্য নেই।